উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আরও বিস্তৃত রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮ জন। আগুন দেওয়াসহ হামলা হয়েছে একাধিক মসজিদে। দলবেঁধে হামলা করা হচ্ছে বিরোধী মতাদর্শীদের ওপর। আর এসব খবর প্রচার বন্ধে টার্গেট করা হচ্ছে সাংবাদিকদেরও। মঙ্গলবার থেকে খবর সংগ্রহে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। আহত হয়েছেন ভারতের অন্তত পাঁচ সাংবাদিক।
বুধবার জম্মুর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলাকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন ‘জে কে ২৪X৭’ নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আকাশ। সাংবাদিক আকাশকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে।
এছাড়া আরো সংবাদকর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এনডিটিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। ওই এলাকাতেই ছবি তুলতে গিয়ে আহত হন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
অনিন্দ্য লিখেছেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে মৌজপুর মেট্রো রেল স্টেশনে পৌঁছতেই এক হিন্দু সংগঠনের সদস্য কপালে তিলক এঁকে দিতে তৎপর হন। আপত্তি করলে শুনতে হয়, ‘ভাই, আপনি তো হিন্দু। তা হলে অসুবিধা কীসের?’
এর ১৫ মিনিট পরেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয় এবং ‘মোদি মোদি’ স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়।
অগ্নিকাণ্ডের ছবি তুলতে যাচ্ছি জানতে পেরে আমাকে বাধা দেন একদল। তারা আমাকে বলেন, ‘ভাই, আপনি তো হিন্দু। তা হলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? আজ হিন্দুরা জেগে উঠেছে।’
বাধা পেয়ে ঘুরপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে আমাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল। তারা আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন সহ-সাংবাদিক সাক্ষী চাঁদ।
তবে একটু পরেই আমি বুঝতে পারি, আমার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’
তারা আমাকে প্যান্ট খুলে ধর্মীয় চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পরে কিছু হুমকি দেওয়ার পরে রেহাই দেয় আমাকে।’
পরে নিজের দপ্তরের অপেক্ষমান গাড়ি খুঁজে না পেয়ে একটি অটো রিকশা ধরে তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চার জন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের উপক্রম করে দুষ্কৃতিরা। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এবং অটোচালক যে নির্দোষ, সে কথা জানিয়ে অনেক অনুনয়ের পরে ছাড়া পান অনিন্দ্য ও চালক।